শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

দাঁতের মাড়ির রোগ প্রতিকার ও প্রতিরোধে হোমিওপ্যাথি 

প্রকাশিত: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

সুন্দর হাসির জন্য থাকা চাই সুন্দর, সুস্থ্য ও সবল এবং রোগমুক্ত দাঁত। আর দাঁতকে রোগমুক্ত রাখতে হলে অবশ্যই নিয়মিত মাড়ি ও দাঁতের যত্ম নিতে হবে। তা না হলে আপনার দাঁত ও মাড়ি রোগাক্রান্ত হয়ে পড়বে। বর্তমানে দাঁত ও মাড়ির রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দাঁত ও মাড়ির রোগে অনেক সময় রোগী ভীষণ কষ্ট পায় এবং অসহ্য যন্ত্রণায় ভোগে।

 

বিভিন্ন কারণে দাঁত ও মাড়ির বিভিন্ন রোগ হয়। ডেন্টাল কেরিজ (দাঁতে গর্ত), পায়োরিয়া এলভিয়োলেরিস,প্লাগ (দন্তমল), এ্যাপিক্যাল ইনফেকসান ও মাড়ির ক্যান্সার ইত্যাদি দাঁত ও মাড়ির উল্লেখযোগ্য রোগ।

 

মিষ্টি বা মিষ্টিজাতীয় খাদ্য বা দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা শর্করাজাতীয় খাদ্য কণা ব্যাক্টেরিয়া নামক জীবানুর সাথে মিশে এক ধরনের এসিড তৈরি করে আর এই এসিড দাঁতের শক্ত আবরণ এনামেলকে ক্ষয় করে ডেন্টাল কেরিজ নামক রোগের সৃষ্টি করে এবং দাঁতে ও দাঁতের গোড়ায় এনামেলের ওপর যে ময়লা আবরণ পড়ে তা আবার পাথড়ে পরিণত হয়ে দাঁত ও মাড়ির মারাত্মক ক্ষতি করে।

 

উক্ত আবরণের নাম পেলিক্যাল। ইহাকে প্ল্যাগ বা দন্তমলও বলে। জীবাণুযুক্ত দন্তমলই দাঁতের গর্ত বা ক্ষয় রোগের প্রধান কারণ। শিশুদের দাঁত ওঠার পর এবং বড়দেরও বহুদিনের জমে থাকা দন্তমলের কারণে দাঁতে ক্ষয় ও গর্ত হয়। এর থেকে শিশুর ঘনঘন জ্বর ও দাঁত ব্যথা হয় এবং টনসিলেও প্রদাহ হতে পারে।

 

কারণ : দাঁতে বিভিন্ন জীবাণুর সংক্রমণ, খাবার খাওয়ার পরে দাঁত ও মাড়ির পরিষ্কার না করা, রাতের খাবার ও সকালের নাস্তা খাওয়ার পরে নিয়মিত দু'বেলা সঠিকভাবে ব্রাশ না করা, কমপক্ষে তিন মাস পরপর ব্রাশ পরিবর্তন না করা, অতিরিক্ত গরম কোনকিছু খাওয়া, মুখ দিয়ে শ্বাস গ্রহণ করা, দীর্ঘদিন অম্ল- অজীর্ণ রোগে ভোগা, তারপর পান-সুপারি, জর্দ্দা খাওয়ার পরে মুখ পরিষ্কার না করা।

 

মিষ্টি বা শকর্রাজাতীয় কোনকিছু খাবার পরে কুলকুচা বা কুলি করে মুখ পরিষ্কার না করা এবং অনেকক্ষণ ধরে চকলেট মুখে রাখা, মাংসের আশ ও আশজাতীয় কোনকিছু দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকলে তা পরিষ্কার না করা,  যেসব শিশুরা ফিটার খায় এবং ফিটার মুখে নিয়ে ঘুমায়, প্রভৃতি কারণে দাঁতের ক্ষয় , গর্ত ও ব্যথা হয়।

 

লক্ষণ : দাঁত শিরশির করা (কারও কারও ঠান্ডা বা গরম পানি বা খাদ্য দাঁতে লাগলে বেশি শিরশির করে), দাঁতের আগা বা গোড়ায় ক্ষয় হওয়া অথবা দুই দাঁতের মাঝে ক্ষয় হওয়া, দাঁতে গর্ত হওয়া, দাঁতের গোড়া ও মাড়িসহ গাল ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা যন্ত্রণা করা এবং দাঁতের গোড়ায় রক্তপুঁজ সঞ্চয় হওয়া, ব্রাশ করার সময় দাঁতের গোড়া দিয়ে রক্ত বের হওয়া অথবা কোন কারণ ছাড়াই যেকোন সময় হঠাৎ করেই দাঁতের গোড়া দিয়ে রক্ত বের হওয়া, অকালে দাঁত নড়া ও ব্যথা করা, দাঁতের গোড়ায় প্ল্যাগ জমে পাথড়ে পরিণত হওয়া, দাঁত হলুদ বর্ণ ধারণ করা প্রভৃতি ।

 

চিকিৎসা : দাঁত ও মাড়িতে সমস্যা হওয়ার সাথে সাথেই চিকিৎসা নিতে হবে । এক্ষেত্রে অবহেলা করা  ঠিক নয়। অনেকে ডাক্তারের কাছে আসেন যখন দাঁতের রোগ মারাত্মক পর্যায় চলে যায়। ফলে রোগী অনেক ভোগান্তিতে পড়ে ও চিকিৎসা করা অনেক জটিল হয়ে যায় । 

 

অনেক সময় দাঁত ফেলে দিতে হয়। কিন্তু দাঁত ফেলাও সঠিক সমাধান নয় কারণ দাঁতে একবার ক্ষয় শুরু হলে আস্তে আস্তে অন্যান্য দাঁতেরও ক্ষয় শুরু হয় যা বাস্তবে আপনারা দেখছেন। তাই আগে দাঁতের ক্ষয় বন্ধ করতে হবে। কিন্তু যে দাঁতটি একেবারে নষ্ট হয়েগেছে তা ফেলে দিতে হবে এবং বাকী দাঁতগুলোর ক্ষয় প্রতিরোধ ও প্ল্যাগ জমা বন্ধ করতে হবে।

 

আর হোমিওপ্যাথি ওষুধ দাঁতের রোগে মন্ত্রেরমত কাজ করে ও ইহা দ্বারা দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধ করাও সম্ভব। আমার অভিজ্ঞতা থেকে দেখলাম যে দন্ত রোগীর অসহ্য দন্ত ব্যথা ওষুধ প্রয়োগের ১ মিনিটের মধ্যে ব্যথা চলে যায়। প্রাথমিকভাবে ক্রিয়োজোট, হেকলা লাভা, মার্কসল, মেজেরিয়াম, ক্যালকেরিয়া ফস, এসিড ফ্লোর, প্ল্যান্টাগো মেজোর প্রভৃতি ওষুধ লক্ষণানুসারে যেকোন ১টি বা ২টি ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে পারেন।

 

রোগের তীব্রতা,হ্রাস-বৃদ্ধি, রোগের কারণ ও উৎস অনুসন্ধান, রোগীর আহার, নিদ্রা, রুচি, অরুচি, ঠান্ডা-গরমে ও নড়াচড়ায় রোগের হ্রাস বা বৃদ্ধি, ধাতুগত ও মানসিক লক্ষণ ইত্যাদি উপসর্গ অনুসারে উক্ত ওষুধের মাত্রা, শক্তি একজন চিকিৎসকই নির্ধারণ করতে পারেন। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা দরকার।

 

দাঁতের যত্ম নেওয়া : নিয়মিত রাতে খাবারের পরে ও সকালে নাস্তা খাবার পরে সঠিক পদ্ধতিতে দাঁতের উপরে নিচে, ভিতরে বাহিরে দুই বেলা ব্রাশ করতে হবে। শর্করাা জাতীয় খাদ্য গ্রহণের পরে এবং মাংসের আশ ও খাদ্য কণা দাঁতের মাঝে আটকে থাকলে তা পরিষ্কার করে ভালভাবে কুলি বা কুলকুচা করতে হবে। 

 

অনেক্ষণ ধরে কোন প্রকার চকলেট মুখে না রাখা এবং মিষ্টি বা মিষ্টিজাতীয় কোনকিছু খাবার পরে ভালভাবে কুলকুচা করতে হবে । দাঁতের প্ল্যাগ থাকলে তা পরিষ্কার করাতে হবে। অন্তত বছরে একবার ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া দরকার।

 

নিষেধ : দাঁতে ব্যথা হলে মিষ্টি বা মিষ্টিজাতীয় খাদ্য, চকলেট খাবেন না। কারণ এতে দাঁতের ব্যথা বৃদ্ধি পায়। দাঁতে ঠান্ডা পানি বা ঠান্ডাকিছু অসহ্য হলে তা মুখে নিবেন না অথবা গরম পানি বা গরমকিছু অসহ্য হলে তা মুখে না নেওয়াই ভাল। 

 

সতর্কতা : দাঁতের ও মাড়ির রোগে অবহেলা না করে দাঁত ও মাড়ির চিকিৎসা নিন নতুবা এ রোগ থেকে ক্যান্সারেরমত  মরণ ব্যাধি আসতে পারে। অনেকে শিশুর দুধ দাঁতের যত্ম নেন না কারণ তারা মনে করে যে, দুধ দাঁততো পরেই যাবে। মনে রাখবেন দুধ দাঁত ক্ষয় হয়েগেলে স্থায়ী দাঁত যথা স্থানে সোজা হয়ে উঠতে পারে না।


 
ডা.জিএম খায়রুজ্জামান

 

মোবাইল  : ০১৭ ৪৩ ৮৩ ৪৮ ১৬
E-mail : [email protected]

 

এই বিভাগের আরো খবর